সুখ আর দুঃখ মিলেই তো জীবন। অর্থ আর টাকা দিয়ে যে সুখ কেনা যায় তার থেকেও নিজেকে বেশি সুখি মনে হয় যখন মন ভালো থাকে। অর্থ-সম্পদ দিয়ে আপনি নিজেকে ভালো রাখতে পারবেন কিন্তু নিজের মনকে সবসময় ভালো রাখতে পারবেন না। যখন মন খারাপ থাকে তখন নিজেকে দুনিয়ার সবথেকে অসুখী ব্যক্তি বলে মনে হয়। মন দেখা যায় না কিন্তু মনের সুখ উপলব্ধি করা যায়। মন যখন ভালো থাকে তখন দুনিয়ার সকল কিছুই ভালো লাগে যখন মন খারাপ থাকে তখন কোন কিছুই ভালো লাগেনা। শত চেষ্টার পরও তখন যেন আমরা কোন কিছুতেই মন বসাতে পারি না।
আমাদের মন সব সময় ভালো থাকে না। হামেশাই মানুষের মনের পরিবর্তন হতে পারে। আজ ভালো আছে তো কাল খারাপ হয়ে যেতে পারে, আর খারাপ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকে। আবার মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ থাকতে পারে।প্রতিযোগিতার পিছনে ছুটতে ছুটতে যে আমরা হাসতে ভুলে যাই তা হয়তো আমরা নিজেরাও জানিনা। পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত নানা কারণে মন খারাপ থাকতে পারে। তাই বলে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। কারন মন যেমন খারাপ থাকে ঠিক তেমনি মন ভালো করার জন্য ও কিছু উপায় আছে যেগুলা আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছি। যদি আপনারা এই উপায়গুলো মেনে চলুন তাহলে খুব তারাতারিই আপনাদের খারাপ মন ভালো হয়ে যাবে। তাহলে নিচে চলুন শুরু করা যাক মন ভালো করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায়ঃ
খেলাধুলা করাঃ
মন ভালো রাখার জন্য সবথেকে কার্যকরী উপায় হচ্ছে খেলাধুলা করা। কারণ খেলাধুলা করার সময় আমরা সকল দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে খেলার উপর মনোযোগ দিয়ে থাকি। খেলাধুলার মাধ্যমে আমরা বিনোদন পেয়ে থাকি। তখন মাঠে আমাদের বন্ধু বান্ধব, সহপাঠী সবাই উপস্থিত থাকে, তাদের সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠি। তখন নিজেকে সবথেকে সুখী বলে মনে হয় ।যখন আমরা কোন খেলায় বিজয়ী হয়ে থাকি তখন অনেক উদযাপন করে থাকি। যার কারণে আমাদের মনের ভিতরে কোন কষ্ট থাকলেও তা নিমিষেই ভুলে যাই। বাইরের কোনো চিন্তা তখন আমাদের মাথার ভিতরে আসেনা। তাই আমাদের মন ভালো রাখার জন্য অবশ্যই নিয়মিত খেলাধুলা করা উচিত।
তাছাড়া আমরা বাড়িতে বসে থেকেও অনেক কিছু খেলতে পারি। যেমন পরিবারের সাথে মিলে সবাই একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলতে পারি। না হলে বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় ডেকে ও আমরা তাদের সাথে বিভিন্ন রকমের খেলা খেলতে পার।এটি আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
হাঁটাহাঁটি করাঃ
সারাদিন ঘরের ভিতরে বসে থাকতে থাকতে মন এমনিতেই খারাপ হয়ে যায়। তাই যখন নিজেকে অস্থির অস্থির মনে হবে তখন বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাতাস আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য কর। তাই যখন বাড়িতে কিছু করার থাকবে না তখন বাইরে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করলে মন ভাল হয়ে যাবে।
বন্ধুদের সাথে কথা বলাঃ
পরিবারের পর বন্ধুরা হল সব থেকে কাছের মানুষ। বন্ধুদের সাথে আমরা নানা রকম আড্ডা বা মজায় মেতে উঠে থাকি। তাই যখন আমাদের মন খারাপ থাকবে তখন আমরা বন্ধুদের সাথে কথা বলে তাদের সাথে মনের কষ্টগুলো শেয়ার করতে পারি।তখন আমাদের মন হালকা লাগবে। কারণ মনের কষ্টগুলো যদি কারো সাথে ভাগ করা যায় তাহলে মন হালকা হয়ে যায় এবং নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও সুখী মনে হয়। তাছাড়া বন্ধুদের সাথে কষ্টের কথা বললে তারাও আমাদের মন ভালো করার জন্য নানা রকম বিনোদন দিয়ে থাকবে। যদি আমরা বন্ধুদের সাথে দেখা করে কথা বলতে না পারি তাহলে অবশ্যই বাড়িতে থেকে ফোনে কথা বলবো। ফোনে কথা বলার মাধ্যমে ও বন্ধুদের বন্ধুরা আমাদের মন ভালো করে দিতে পারে।
ইতিবাচক মনোভাবঃ
যখন আমাদের মন খারাপ থাকবে তখন নেতিবাচক চিন্তার কারণে আমাদের মন আরো বেশি খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই সবসময় নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। কারণ ইতিবাচক চিন্তা ধারা আমাদের মনে একটা সাহস আসে।সব সময় ইতিবাচক মানুষদের সাথে মিশতে হবে। নেতিবাচক মানুষদের সাথে দূরে দূরে থাকতে হবে। কারণ তারা তাদের নেতিবাচক কথা দ্বারা আমাদের আরো বিভ্রান্ত করতে পারে।
গান গাওয়া ও ছবি আঁকাঃ
মন খারাপ থাকার সময় নিজের পছন্দের কোন গান গাইতে পারেন। তাছাড়া যদি ভালো ছবি আঁকতে পারেন তাহলে ছবি আঁকার কাজে লেগে যেতে পারেন। কারণ আমরা যত অন্য কোন কিছুতে ব্যস্ত থাকবো ততো আমাদের মন ভাল হতে থাকবে। মন ভালো রাখার জন্য অনেক কার্যকরী একটি উপায় হলো গান গাওয়া বা ছবি আঁকা।
ব্যায়াম করাঃ
অনেক সময় শারীরিক সুস্থতার ওপর মন ভালো থাকা নির্ভর করে। যদি আমরা শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকি তাহলে মন ভালো থাকার সম্ভাবনা কই। তাই শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারি।নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের চাপ থেকে মুক্তি দেয়
ঘুমঃ
পরিমিত ঘুম আমাদের মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। একটি সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। তাই আমাদের সময় মত ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর কারণে মন অনেক হালকা হয়ে যায়। মনে তখন একটি শান্ত শান্ত ভাব আসে।
হাসিখুশি থাকাঃ
সব সময় আমাদের হাসিখুশি থাকতে হবে। হাসতে মন না চাইলেও আমাদের হাসার চেষ্টা করতে হবে। কারণ হাসির মাধ্যমে আমাদের মনের দুঃখটা বেরিয়ে যায়। তাই পরিবারের সাথে বিভিন্ন গল্প বা বিভিন্ন রকম বিনোদনমূলক মুভি নাটক দেখার মাধ্যমে আমাদের হাসতে হবে।
ঘুরতে যাওয়াঃ
যখন কোন কিছুই ভালো না লাগবে অথবা মন খারাপ থাকবে তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরে আসা যায়। পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কোন সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে কিছু সময় কাটিয়ে আসলে আমাদের মন ভালো হয়ে যাবে।কারণ ঘুরার মাধ্যমে আমাদের মনের ভিতর অশান্তি সৃষ্টি হয়।
শেষ কিছু কথা হলোঃ
নিজেকে নিজের যত্ন নেওয়া। কারণ নিজেকে খুশি করার চাবিকাঠি আমাদের নিজের হাতে। শুধু সে চাবিকাঠি কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে। নিজের মনের কথা শুনতে হবে, মনের কথা কে উপলব্ধি করতে হবে। মন কি বলে সেভাবে চলতে হবে, সেভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত সুখ আমরা উপলব্ধি করতে পারবো। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।